ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতি কি?
ইতিবাচক অর্থনীতিঃ
অর্থনীতি শাস্ত্রের ঐ অংশ যেখানে অর্থনীতিবিদরা কি করা যায়, কি ভাবে করা যায় এবং কি কারণে করা হবে এই জাতীয় বক্তব্য পর্যালোচনা করেন, এক্ষেত্রে ইতিবাচক বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন সামাজিক আচরণ ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন- সরকারের কোন কোন নীতি বেকারত্ব দূর করবে এবং কি কি নীতি মুদ্রাস্ফীতি দূর করবে এই জাতীয় বক্তব্যকে ইতিবাচক বক্তব্য বলা যায়। ইতিবাচক বক্তব্য সাধারণত বাস্তর তথ্য দ্বারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায়। যেমন-সরকারি ঘাটতি ব্যয় বেকারত্ব দূর করবে এবং তা দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে এই বক্তব্য বাস্তব তথ্য দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব। যদি বাস্তব তথ্য এই বক্তব্য প্রতিফলিত করে তবে এই জাতীয় বক্তব্য ইতিবাচক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত বলা যায়।
নীতিবাচক অর্থনীতিঃ
অর্থনীতির যে শাখায় নীতিগত মূল্যায়ণের ভিত্তিতে বিভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি বলা হয়। অর্থনীতির এই শাখায় কোনটি করা উচিত কোনটি করা উচিত নয়, এই ধরনের নীতিবাচক বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। যেমন- বেকারত্বের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি ভালো এবং এই কারণে বাজেট উদ্বৃত্ত নীতি ভালো এটি একটি নীতিবাচক বক্তব্য। আবার আয় বন্টন সমাজে সুষম হওয়া উচিত। এটি একটি নীতিবাচক বক্তব্যের উদাহরণ। সাধারণত নীতিবাচক বক্তব্যগুলো কল্যাণমুখী ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই জন্য সংকীর্ণ অর্থে নীতিবাচক অর্থনীতি অনেক কল্যাণ অর্থনীতি হিসাবে অভিহিত করেন।
ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য
ইতিবাচক এবং নীতিবাচক বক্তব্য অর্থনীতিতে পর্যালোচনা করলে দুয়ের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে এদের মধ্যে সকল পার্থক্য তুলে ধরা হলো :
১। সংজ্ঞা :
অর্থনীতির যে শাখায় কি করা হবে, কিভাবে করা যায় এবং কি কারণে করা হবে এই জাতীয় বক্তব্য পর্যালোচনা করাকে ইতিবাচক অর্থনীতি বলা হয়। পক্ষান্ত রে, অর্থনীতি যে নীতিগত মূল্যায়ণের ভিত্তিতে বিভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি বলে।
২। বিষয়ঃ
ইতিবাচক অর্থনীতি হচ্ছে সামাজিক সত্য বা ধ্রুববস্তু। যেমনঃ মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বের হার হত্যাদি। এবং নীতিবাচক অর্থনীতিতে সমাজে কী হওয়া উচিত তাই নিয়ে আলোচনা করে।
৩। মতভেদঃ
ধণাত্মক অর্থনীতি সম্পর্কে কোন মতভেদ দেখা দিলে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে সেগুলো গ্রহণ অথবা বর্জন করা যায়। অন্যদিকে, নীতিবাচক অর্থনীতির ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা দিলে বাস্তব তথ্য দ্বারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো গ্রহণ বা বর্জন বা যায় না।
৪। ভিত্তিঃ
ইতিবাচক অর্থনীতি তথ্যনির্ভর, এর সঙ্গে মূল্যবোধের কোনরূপ সম্পর্ক নেই। অপরদিকে, নীতিবাচক অর্থনীতিতে কোনটি ভাল এবং কোনটি মন্দ তা বিচার করা হয়। ফলে নীতিবাচক অর্থনীতিতে মূল্যবোধের প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।
৫। পর্যবেক্ষণঃ
ইতিবাচক অর্থনীতি ইতিবাচক বা বাস্তব ভিত্তিক অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। পক্ষান্তরে, নীতিবাচক বক্তব্য নীতিবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত যার বক্তব্যসমূহ মূল্যবোধের মাপকাঠিতে বিচার করতে হয়।
৬। অর্থনীতিতে বিজ্ঞান :
ইতিবাচক অর্থনীতি একটি বিশুদ্ধ বিজ্ঞান। পক্ষান্তরে নীতিবাচক অর্থনীতি হলো ইতিবাচক অর্থনীতির ফলিত বিজ্ঞান।
0 Comments